সাবিত আল হাসান
নারায়ণগঞ্জে লকডাউন তুলে দেবার পর থেকেই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে জনজীবন। করোনার প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সকলে। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান লোকসান গুনে কর্মচারী ছাঁটাই শুরু করায় বেকারের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। অপরদিকে জেলার অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র হওয়ায় বিভিন্ন সমিতি থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে নিজেদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে থাকেন। করোনায় সকল কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত করে দেয়ায় একদিকে যেমন বাড়ছে ঋণ পরিশোধের চাপ, অন্যদিকে আর্থিক টানাপোড়নে পরে গ্রহিতাদের মাথায় দুশ্চিন্তার ছাপ। সব মিলিয়ে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছেন সবাই।
তবে সরকার থেকে বিভিন্ন এনজিও, সমিতিও ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে কিস্তি আদায় ৩০ জুন পর্যন্ত শিথিল করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এই অবস্থায় সমিতিগুলো তাদের নিয়মিত কিস্তি আদায়ের জন্য বের হলেও কাউকে চাপ প্রয়োগ করতে পারবে না। তবে গ্রহীতাদের অনেকেই পাননি তাদের নিয়মিত বেতন। লকডাউনে বিভিন্ন স্থান থেকে ধার কর্জ করে চলতে হয়েছে প্রায় ২ মাস। এছাড়া অনেকেই চাকরি হারিয়ে ফেলায় এক অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে পরিবার চালাতে গিয়ে হিমশিমের পাশাপাশি ঋণ ও এনজিওয়ের কিস্তি পরিশোধের চাপে আত্মহত্যা করেছেন তিন সন্তানের জননী নিপা আক্তার (৩১)। গত ৯ জুন উপজেলার গোপালদী পৌরসভার রামচন্দ্রাদী গ্রামের বাড়িতে আত্মহত্যা করেন তিনি। নিপা স্থানীয় ওয়াদ আলীর স্ত্রী, তার বাবার বাড়ি উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নে।
জানা যায়, ১৪ বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় নিপার। গত ৫ বছর আগে তার স্বামী জীবিকার তাগিদে মালয়শিয়া চলে যায়। বর্তমানে সেখানে লকডাউন থাকায় গ্রাম থেকে বিদেশে অর্থ পাঠাতে হতো। পাশাপাশি পরিবার চালাতে ও ঋণ এবং এনজিওয়ের কিস্তি পরিশোধ করতে হতো। গত কয়েকমাস ধরে কিস্তি ও ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় চাপে পড়ে নিপা। সেই চাপ সামলাতে না পেরে তিন সন্তাদের জননী নিপা আত্মহত্যা করেন।
মূলত, কলকারখানা অধ্যুষিত এই জেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শ্রমিকরা এসে নারায়ণগঞ্জে অস্থায়ী ভাবে বসবাস করে। তবে ধীরে ধীরে বিভিন্ন ঘনবসতিপূর্ন এলাকা থেকে মানুষজন ক্রমশই অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। বিশেষ করে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় ক্রমশই খালি হতে শুরু করেছে ভাড়া বাসাগুলো। অধিকাংশ তাদের খরচ কমিয়ে আনতে অন্যত্র চলে গেছেন, আবার অনেকে চাকরি হারিয়ে ফিরে গেছেন নিজ গ্রামে। এসকল এলাকার অলিগলিতে বাসা খালি হবার বিজ্ঞাপন বেড়েছে দিগুণেরও অধিক। ফলে যারা শুধুমাত্র বাড়ি ভাড়ার উপর নির্ভরশীল তাদেরও বেগ পোহাতে হচ্ছে সমানভাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা শুধু গার্মেন্টস শ্রমিকদের নয়, বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের আর্থিক অবস্থা দুর্বল করে ফেলেছে। ব্যবসা বাণিজ্য সর্বত্রই খা খা দশা। মার্কেটগুলোতে নেই পর্যাপ্ত ক্রেতা। লোকসান আর দোকান ভাড়া দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে যাচ্ছেন বিক্রেতারা। এমন অনিশ্চয়তা কবে কাটবে জানেন না কেউ। করোনা মহামারী শেষে আবারও স্বাভাবিক হবে সব এমন প্রত্যাশা আর চোখের সামনে অনিশ্চয়তা কেবল বেড়েই চলেছে।